মালয়ালম ছোটো গল্প : : অবন্তীর রাজকুমারী
নিজেকে অবন্তীর রাজকন্যা বলে বিশ্বাস করা বৃদ্ধা তার পুত্রবধূর দেওয়া দুপুরের খাবার প্যাকেটে ভরে যথারীতি পার্কে এসেছিলেন। উনি প্যাকেটটাকে খুব সাবধানে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রাখলেন। তারপর, মশার কামড়ে শুকিয়ে যাওয়া এবং কাটাকুটির দাগওলা পাদুটোকে সামনের দিকে এগিয়ে দিলেন। তারপর উনি তার আঙুলের মোচড় দিয়ে এবং কুণ্ডলী পাকিয়ে চুলের একটি গোছাকে ক্ৰমশ পাকাতে শুরু করলেন।
নোংরা পোশাক পরা তিনজন যুবক তার কাছে এসে হাত জোড় করে অভ্যর্থনা জানাল।
লম্বা যুবকটি বলল, “নমস্কার, হে অবন্তীর রাজকুমারী। আশা করি আপনি সুস্থ আছেন।” তার সঙ্গীরা হেসে উঠল। বুড়িও স্বভাবসুলভ হাসিতে যোগ দিল।
“আমার স্বাস্থ্য এক্কেবারে ঠিকঠাক আছে,” তিনি বললেন, “কিন্তু আমি আজ আমার চুল কোঁকড়া করতে পারছি না। আমি যদি আমার চুল কোঁকড়া করতে না পারি, আমি আমার মুকুট পরতে পারব না।”
“হুম, সেটাতো খুব গুরুতর সমস্যা,” একজন যুবক বলল।
“আজ আপনার বিয়ের দিন। তাহলে তো আপনাকে অবশ্যই মুকুট পরতে হবে”, আরেকজন বলল।
“তাই না কি?” বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে কি আজকেই আমার বিয়ে হবে?”
“সারা পৃথিবীর লোকেরা জানে যে আজই আপনার বিয়ের দিন,” লম্বা যুবকটি বলল, “তা না হলে আমরা এই শহরে আসতাম না।”
“আচ্ছা, আপনাদের সঙ্গে আমার কি আগে কখনো দেখা হয়েছিল?” বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করলেন।
“না, আমরা এখানে নতুন এসেছি,” যুবকটি বলল।
“এই যুবক বঙ্গরাজ্যের রাজা। অন্যজন কেরালার রাজা। আমি কলিঙ্গের অধিপতি। আমরা চাই আপনি আমাদের অন্তত একজনকে আপনার স্বামী হিসেবে বেছে নিন।
বিগতযৌবনা মহিলাটি খুশিতে হাসল। উনি তাঁর সামনের দুটি দাঁত হারিয়ে ফেলেছেন তাই তিনি যখন হাসলেন, দাঁতের ফাঁক দিয়ে জিভটা দেখা গেল।
“আপনাদের তিনজনের সঙ্গে দেখা হয়ে আমার বেশ ভালো লেগেছে,” উনি বললেন। তারপর একটু লজ্জার ভাব দেখিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। তাঁর মুখমণ্ডলে শূন্য হাসির রেশ রয়ে গেল।
বঙ্গরাজ্যের রাজা বললেন, “রাজকুমারী, আমরা আপনার কাছে অনুগ্রহ চাইতে এসেছি।”
“রাজনন্দিনী আজ সন্ধ্যায় আপনি আর বাড়িতে যাবেন না। ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকুন প্লিজ। পার্কটি তালা বন্দী হওয়ার পরে আমরা দেয়াল বেয়ে উঠে আপনার কাছে আসব। আমরা এই সুন্দর উদ্যানের ভিতরে আপনার শুভ স্বয়ম্বরা অনুষ্ঠানটি নিঃশব্দে উদযাপন করব।”
বুড়িটি এবার খুশিতে হাততালি দিলেন। তিনি তার কেশদাম সামনের দিকে সড়িয়ে দিলেন এবং তারপর তার ধূসর চুলের গোছার আড়াল থেকে সে যুবকদের দিকে অপাঙ্গ দৃষ্টিতে তাকালেন।
“তাহলে ঠিক আছে। আজ রাতে দেখা হবে হে অবন্তীর রাজকুমারী,” কেরালার রাজা তাকে অভিবাদন করে বলল।
“আমরা আপনাকে ভীষণ ভালবাসি,” তাদের একজন বলল।
“আমাদের হতাশ করবেন না,” আরেকজন বলল।
“না, না, আমি আপনাদের নিরাশ করব না,” বৃদ্ধা বললেন।
সেই রাতে, তারা আবার একসঙ্গে তাঁর কাছে এল।
“ধর মহিলা যদি চিৎকার করে?” লম্বা যুবকটি একজনকে জিজ্ঞাসা করল।
“আমি সেটা সামলে নেব—”, দ্বিতীয় যুবকটি বলল।
“মহিলাটি তোমাকে চায়।”, তৃতীয় যুবকটি বলল।
“আপনারা আমার কাছ থেকে কী চান?” কাঁপা কাঁপা গলায় মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন।
যুবকরা টেনে তাঁর পোশাক খুলে ফেলল। তাঁর কোনো অন্তর্বাস ছিল না। একজন অনেক্ষন ধরে তাঁর স্তনের দিকে তাকিয়ে হা হা করে হেসে উঠল।
“আমাকে মেরো না,” মহিলাটি চিৎকার করে বললেন।
“হে সুন্দরী, আমরা তোমার স্বামী,” কলিঙ্গের রাজা তার কানের লতিতে ঠোকরাতে ঠোকরাতে বলল।
“ওহ, আপনি আমাকে ভয়ানক আঘাত করেছেন” মহিলাটি চিৎকার করে উঠল, “আমি এই ব্যথা সহ্য করতে পারছি না, আমাকে কামড়ে কামড়ে মেরে ফেলো না।”
সে এবার তাদের কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য লড়ছিল।
“থামো” তাদের একজন বলল। “আর একটা কথা বললে কথা, আমরা তোমাকে মেরে ফেলব।”
“আমি অবন্তীর আসল রাজকন্যা নই” বুড়ি খুব উঁচু গলায় কান্নার মাঝে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “আমি বিয়ে করতে চাই না।”
“অ্যাই, চুপ, একটুও টু শব্দ করবি না বুড়ি মাগী,” তাদের মধ্যে একজন বলে উঠল, একটি ট্রেন যেমন প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গতি তোলে ঠিক তেমন ভাবে সে হাঁপাচ্ছে। আরেকটা যুবক তার অভদ্র লাল হাতের তালু দিয়ে বৃদ্ধার নাক মুখ বন্ধ করে রেখেছে।
“মরে গেল নাকি?” লম্বা যুবকটি জিজ্ঞাসা করল। মহিলা পা ছোঁড়া বন্ধ করে দিয়েছে।
“মরে যায় নি তো?” লোকটা তার সঙ্গী যুবকদের জিজ্ঞাসা করল।
“সম্ভবত!” কমবয়সী যুবকটি বলল।
লেখিকা পরিচিতি : কমলা সুরাইয়া (জন্ম ৩১ মার্চ ১৯৩৪ – ৩১ মে ২০০৯), জনপ্রিয়ভাবে তার এক সময়ের কলম নাম মাধবিকুট্টি এবং বিবাহিত নাম কমলা দাস দ্বারা পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় কবি এবং ইংরেজিতে একজন ভারতীয় কবি এবং ভারতের কেরালা থেকে মালয়ালম ভাষায় একজন লেখক ছিলেন। কেরালায় তার জনপ্রিয়তা মূলত তার ছোটোগল্প এবং আত্মজীবনীর উপর ভিত্তি করে, যখন তার ইংরেজিতে লেখা কবিতা, কমলা দাস নামে লেখা, কবিতা এবং সুস্পষ্ট আত্মজীবনীর জন্য বিখ্যাত। তিনি একজন বহুল পঠিত কলামিস্টও ছিলেন এবং নারী সমস্যা, শিশু যত্ন, রাজনীতি ইত্যাদি সহ বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন। নারী যৌনতার প্রতি তার উদার আচরণ, তাকে তার প্রজন্মের জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে আইকনোক্লাস্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ৩১ মে ২০০৯, ৭৫ বছর বয়সে তিনি পুণের জাহাঙ্গীর হাসপাতালে মারা যান।