অমিত মুখোপাধ্যায়
সেই ভোর থেকে ‘বউ কথা কও’ এক টানা ডেকে চলেছে। তার সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে ডাকছে ‘চোখ গেল’ পাখি। মাঝে মাঝে ঠিক সামনের অরণ্যাবৃত পাহাড় সচকিত হয়ে উঠছে কেকাধ্বনিতে। কেন্দু গাছে টাঙানো হাঁড়ি থেকে জল খেতে এসে অমসৃণ ডালে বসে জিরিয়ে নিচ্ছে বাঁশপাতি পাখি। প্রসারিত পাহাড়ের সমান্তরালে উড়ে গেল দুধরাজ, অর্থাৎ ‘এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার।’ তার লম্বা লেজ যেন সবুজের উপর সাদা রেখা টেনে গেল। ইতিমধ্যে ঘাসের বুকে পোকা খুঁটতে নেমে পড়েছে শালিখের ঝাঁক। পোকার দখল নিয়ে এই সাত সকালেই লড়াই বাঁধলো দুটি বুলবুলির। আরও অনেক পাখির বিচিত্র কিচমিচ শুনছি। কেউ কেউ শিস দিচ্ছে। কিন্তু তাদের দেখতে পাচ্ছি না। এ দিকে দলমা অভয়ারণ্যে প্রভাতী রোদ্দুর ক্রমশ চড়া হচ্ছে। কাল সন্ধ্যায় মৃদু মেঘবৃষ্টির পর রাতভর প্রবাহিত উতল হাওয়া যেন নিকিয়ে দিয়েছে আকাশ। এখন আকাশ মেঘশূন্য। মাকুলাকোচা বন বিশ্রামাগারের হাতায় বসে ভূমিজ যুবক শম্ভু সর্দারের বানানো চায়ে চুমুক দিতে দিতে কোটরা হরিণের ভীত-চঞ্চল বিচরণ দেখছি। কাল দলমা অভয়ারণ্যের ‘কোর এরিয়া,’ যেখানে পর্যটকের প্রবেশ নিষিদ্ধ, সেখানে শুটিং করে আসার পর আজ বুনো গ্রাম দেখতে যাব। দলমা মানে শুধু অরণ্য, বন্যপ্রাণী নয়, কঙ্কাদশা, খোখরো, বড়াম, টুয়লুংয়ের মত জনজাতীয় গ্রামও। কারণ এ দেশে অরণ্য ও মানুষ একে অপরের সঙ্গী। সেই সখ্যকে ফ্রেমবন্দি করতে বেরোবার আগে জানাই সুপ্রভাত৷ সবার মনে শিস দিক পাখি। রোদ্দুর ছড়িয়ে পড়ুক জীবনের খাঁজে ভাঁজে।
দলমা অভয়ারণ্যের মাকুলাকোচা বন বিশ্রামাগারের মখমল সকালে , ছবি : রিনি