কর্তার সিং দুগ্গাল
সেবার গরমকালে মুরির একটা বাড়িতে আমি অতিথি হয়ে গিয়েছিলাম। ওই বাড়ির গৃহকত্রী তাঁর চার মেয়ে এবং আমি মিলে মোট ছয় জন ছিলাম।
বাড়িটার নিচের তলায় একটা ঘরে আমি থাকতাম। পরিবারটি দোতলায় থাকত। ওখানে বেশ কয়েকটা ঘর ছিল। তবে, তারা দুটো মাত্র ঘর এবং একটা মাত্র বারান্দা ব্যবহার করত; বাকি ঘরগুলো ব্যবহার করা হত না এবং সাধারণত তালাবন্দীই থাকত।
সেই রাতটা বেশ গভীর ছিল, ঘন অন্ধকার এবং ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছিল। রাত দুপুরে কারো ডাকে আমি হঠাৎ গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। বুঝতে পারছিলাম, বাড়ির ভদ্রমহিলা সিঁড়ির মুখ থেকে আমার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছিলেন। ব্যাপারটা বুঝতে আমি আমার বিছানা থেকে একটা লাফ দিয়ে তাড়াতড়ি সিঁড়ির কাছে চলে এলাম। কয়েক ধাপ এগোতেই আমি দেখলাম পুরো পরিবারটা বিশেষ কিছু একটার ভয়ে ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। মুহুর্তের মধ্যে, আমি তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছালাম। গৃহকর্ত্রী ভদ্রমহিলা একটি বন্ধ ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওটা সবসময়ে তালাবদ্ধ থাকত।
সেটা দেখিয়ে গৃহিণী ভদ্রমহিলা ফিসফিস করে বললেন, “এই ঘরে একটা চোর ঢুকেছে” তারপর তাঁর হাতে থাকা লাঠিটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।
আমি কোন কিছু না বুঝেই জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কিভাবে বুঝলেন?”
“চোরটা সিন্দুকের ডালাগুলো খুলে ফেলছে।” তিনি যখন এই কথা বলছেন, সেই সময় আমরা ঘরের ভিতর থেকে একটা বিকট শব্দ শুনতে পেলাম।
“হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন,” আমি বললাম এবং দরজাটা খোলার জন্যে তাড়াহুড়ো করে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।
কিন্তু আমি দরজাটা খোলার আগেই, ভদ্রমহিলা আমাকে একপাশে সরিয়ে দিলেন এবং নিজেই দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন এবং আলো জ্বাললেন। আলো জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখলাম ঘরের এক কোণে একটি বাঁদর ঝুলছে।
অনুপ্রবেশকারীকে দেখে আমরা সবাই এবার হাসিতে ফেটে পড়লাম। তারপর দেখলাম, ঘরের পাশের বারান্দার দিকে একটা জানালা খোলা, বাঁদরটা ওই জানালা থেকে লাফ দিয়ে বাড়ির পাশের বনের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমি জানালার পাল্লা টেনে সেটাকে বন্ধ করে ঘরে তালা দিয়ে গৃহিণী ভদ্রমহিলাকে বললাম, “আপনি আমাকে ডেকেছেন, কিন্তু আপনি আমাকে দরজাটাও খুলতে দিলেন না।”
উত্তরে উনি বললেন, “আমি কিভাবে তোমার জীবন নিয়ে ঝুঁকি নিতে পারি? আসলে, তুমি ছাড়া এখানে আমরা সবাই মহিলা। আমার একজন পুরুষের সমর্থনের দরকার ছিল মাত্র।”
ভদ্রমহিলার কথাটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আমি এবার ওঁর মুখের দিকে তাকালাম। ওটাই ছিল আমার দেখা একজন মহিলার সবচেয়ে সুন্দর মুখ।
মূলগল্প : পাঞ্জাবি লেখক কর্তার সিং দুগ্গালের ‘এক সুন্দর চেহরা’ শিরোনামের ছোটগল্পের বাংলা অনুবাদ।
লেখকের পরিচিতি : কর্তার সিং দুগ্গাল (১লা মার্চ ১৯১৭ – ২৬শে জানুয়ারি ২০১২) একজন ভারতীয় লেখক যিনি পাঞ্জাবি, উর্দু, হিন্দি এবং ইংরেজিতে লিখেছেন। তিনি মূলত ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক ও নাটক লিখেছেন। ভারতীয় ও বিদেশী ভাষায় তাঁর অনেক রচনা অনূদিত হয়েছে। অল ইন্ডিয়া রেডিওর পরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৮ সালে তিনি পদ্মভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৭ সালে, তিনি সাহিত্য একাডেমি কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ সম্মান সাহিত্য একাডেমিলাভ করেন।