দোজাখ সে ওয়াপসি

দোজাখ সে ওয়াপসি

(উর্দু ছোটো গল্প)

রাম লাল


নরক থেকে ফেরা লোকটার ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস ছিল।
একদিন ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে সে নিজেকে নরকের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। ভেতরে প্রচণ্ড এক আগুন জ্বলছিল। লাফানো শিখা থেকে নির্গত তাপ তার শরীরকে ঝলসে দিল আর সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের বাড়িঘর এবং সেখানকার স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মনে পড়ল।
লোকটা একপা একপা করে পিছিয়ে বাড়ি ফিরে গেল। বাড়ি ফিরে সে দেখতে পেল যে বাড়ির দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো। সে দরজায় ধাক্কা দিয়ে তার স্ত্রীকে নাম ধরে ডাকল।
বাড়ি থেকে কোন সাড়া পাওয়া গেল না। সে আবার ধাক্কা দিল, এবার সে খুব জোর ধাক্কা দিল। “খোলো! দরজা খোলো!” সে উচ্চঃস্বরে ডাকল।
দরজাটা হঠাৎ খুলে গেল। তার স্ত্রীর পরিবর্তে তার সামনে তখন অন্য আরেকজন মহিলা দাঁড়িয়ে। আর একজন পুরুষ মহিলার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল, তার হাত মহিলার কাঁধে ছিল। ওরা দুজনেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে লোকটাকে দেখছিল।
ওরা দুজন লোকটার কাছে অপরিচিত ছিল এবং সেও তাদের কাছে অচেনা। হঠাৎ তার মনে হল যে হয়তো এরা তার নতুন ভাড়াটিয়া, সে যখন দূরে ছিল তখন হয়ত এরা এসেছে। কিন্তু তিনি তো মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। এত কম সময়ের মধ্যে এতখানি বদল কিভাবে ঘটল? কিন্তু সম্ভবত এই সংক্ষিপ্ত সময়ই প্রসারিত হয়ে হয়ত কয়েক যুগ হয়েছে।
“আমি এই বাড়ির মালিক। আমি এখানে থাকি।” সে বলল।
সে যাদেরকে সম্বোধন করে এই কথাগুলো বলল তারা অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে চাইল।
মহিলাটি তার সঙ্গী লোকটিকে বললো, “ক…ক…ক্ক…কে…?
লোকটি তাকে উত্তর দিল, “বা…বা…বা …ব্বা…”
তারা যে ভাষায় কথা বলছিল তা লোকটার কাছে একেবারেই বোধগম্য ছিল না। সে বলল, “আমি আমার বউকে রেখে এসেছি। সে কোথায়? আমাকে ঢুকতে দাও, দেবে তোমরা?”
মহিলাটি বলল, “ক…ক…ক্ক…কে…”
লোকটা বলল, “ই…ই…ই…”
তারা দুজনে তাকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে ভিতর থেকে আবার তালা লাগিয়ে দিল।

মূলগল্প : উর্দু গল্প ‘দোজাখ সে ওয়াপসিলেখক: রামলাল, উর্দু থেকে ইংরেজি অনুবাদ কৃতজ্ঞতাজয় রতন

লেখক পরিচিতি : লেখক রাম লাল ছবরা সাধারণত রাম লাল নামে পরিচিত। তিনি উর্দু ছোটগল্প লেখকদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি ১৯২৩ সালে অবিভক্ত পাঞ্জাবের (বর্তমানে পাকিস্তানে) মিয়ান ভ্যালিতে জন্মগ্রহণ করেন। মিয়ান ভ্যালির মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রাম লাল স্থানীয় সনাতন ধর্ম স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। সেখানেই তিনি রেলওয়েতে চাকরি নেন। পাঁচ বছর চাকরি করার পর নিজের ব্যবসা করার জন্য এই চাকরিটি ছেড়ে দেন। কিন্তু ব্যবসায় খুব একটা সাফল্য না পেয়ে তিনি পুনরায় রেলওয়েতে যোগ দেন।
রাম লাল প্রথমে তাসাভুর নামে একটি উপন্যাস লিখেছিলেন কিন্তু তার বাবা স্ত্রীর পাণ্ডুলিপি নষ্ট করে দেন। লাহোরের ‘খৈয়াম সাপ্তাহিক’ পত্রিকায় তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখায় প্রথমদিকে কৃষাণ চন্দর ও মান্টোর ছাপ ছিল। তবে পরবর্তীকালে নিজস্ব লিখন শৈলী গড়ে তোলেন এবং তার বিষয়বস্তু প্রেম চাঁদের মতো হতে থাকে। তার লেখার পটভূমি ছিল গ্রামীণ এবং তার চরিত্রগুলো ছিল চারপাশের সাধারণ জীবন্ত মানুষ। তিনি বাস্তববাদ এবং দৈনন্দিন জীবনের সামাজিক উদ্বেগের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। যদিও তার অন্যতম বিষয় ছিল সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা। কারণ তাঁর প্রত্যক্ষ্য অভিজ্ঞতা ছিল কারণ তিনি নিজেই পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত একজন বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তার বেশ কিছু গল্পে এই বিষয়টিকে প্রতিপাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাঁর অনেক গল্প রেলভ্রমণ এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, কারণ রেলওয়ে ছিল তাঁর পেশার জায়গা। ১৯৯৩ সালে তিনি সাহিত্যে অবদান স্বরূপ সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান।
রামলাল দৈনিক ‘আফতাব আলম’, লাহোর এবং ‘আলফাজ’ আলীগড়ও সম্পাদনা করেন। উত্তরপ্রদেশ উর্দু একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি নিযুক্ত হন এবং এই ক্ষমতায় প্রশংসনীয় কাজ করেন। ‘গালি গালি’, ‘আওয়াজ সে পেহচান’, ‘ইনকিলাব আনে তক’, ‘উখরে হুভে লোগ’, ‘চিরাগোঁ কা সফর’, ‘মাসুম আঁখে’ এবং এক ‘অউর দিন কো প্রণাম’ তাঁর উল্লেখযোগ্য ছোটগল্পের সংকলন। তিনি ‘মুঠঠি ভর ধূপ’ এবং ‘কোহরা অর মুশকুরাহাট’ নামে দুটি উপন্যাসও লিখেছেন। তাঁর ‘জর্দ পাততোঁ কি বাহার’ একটি ভ্রমণ কাহিনী।

Facebook
Twitter
LinkedIn

Privious Cover Stories

মোসলেম মিঞার কড়চা

সঞ্জীব কুমার সাহা গল্পটা রাজবিহারের। রাজবিহার জেলায় এগারোটা ব্লকের অন্যতম হল চুয়াডাঙ্গা উন্নয়ন ব্লক। কাছেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত। তো এই চুয়াডাঙ্গা ব্লকের অফিসে মোসলেম মিয়া নামে

Read More »